গুগল

- তথ্য প্রযুক্তি - কম্পিউটার (Computer) | | NCTB BOOK

গুগল (Google) হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন এবং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি, যা ইন্টারনেট-ভিত্তিক সেবাসমূহ, সফটওয়্যার, এবং হার্ডওয়্যার পণ্য সরবরাহ করে। গুগলের মূল উদ্দেশ্য হলো বিশ্বব্যাপী তথ্য সংগঠিত করা এবং সেটি ব্যবহারকারীদের জন্য সহজলভ্য এবং উপকারী করে তোলা। এটি ১৯৯৮ সালে ল্যারি পেজ (Larry Page) এবং সের্গেই ব্রিন (Sergey Brin) দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এবং এরপর থেকে এটি প্রযুক্তি জগতে একটি বিপ্লব এনেছে।

গুগলের ইতিহাস:

  • প্রতিষ্ঠা: গুগলের প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৯৮ সালে, যখন ল্যারি পেজ এবং সের্গেই ব্রিন তাদের গবেষণা প্রকল্প হিসেবে গুগল তৈরি করেন। তখন এটি একটি সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে কাজ করত, যা ওয়েব পেজগুলির প্রাসঙ্গিকতা অনুযায়ী ফলাফল প্রদর্শন করত।
  • বিকাশ: ২০০৪ সালে গুগল পাবলিক কোম্পানি হিসেবে শেয়ার বাজারে আসে এবং দ্রুত বড় হতে থাকে। তারা সার্চ ইঞ্জিনের বাইরে নানা ধরনের সেবা এবং পণ্য তৈরি করে, যেমন Gmail, Google Maps, এবং Google Drive।

গুগলের প্রধান সেবা ও পণ্যসমূহ:

১. Google Search:

  • এটি গুগলের মূল সার্চ ইঞ্জিন, যা ব্যবহারকারীদের ওয়েব পেজ, ছবি, ভিডিও, খবর, এবং অন্যান্য অনলাইন কন্টেন্ট খুঁজতে সাহায্য করে। এটি গুগলের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রাথমিক সেবা।

২. Gmail:

  • গুগলের ফ্রি ইমেইল পরিষেবা, যা দ্রুত, নির্ভরযোগ্য এবং বিজ্ঞাপন সমর্থিত। এটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ইমেইল সেবাগুলির একটি।

৩. Google Maps:

  • গুগলের মানচিত্র এবং নেভিগেশন সেবা, যা ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন স্থান খুঁজে পাওয়া, রুট পরিকল্পনা করা, এবং লাইভ ট্রাফিক আপডেট পাওয়ার সুযোগ দেয়।

৪. Google Drive:

  • গুগলের ক্লাউড স্টোরেজ সেবা, যা ব্যবহারকারীদের তাদের ফাইল এবং ডকুমেন্ট অনলাইনে সংরক্ষণ এবং শেয়ার করতে সাহায্য করে। এটি ডকুমেন্ট, স্প্রেডশিট, এবং প্রেজেন্টেশন তৈরির জন্যও ব্যবহৃত হয়।

৫. YouTube:

  • ২০০৬ সালে গুগল YouTube ক্রয় করে, যা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম। এটি ব্যবহারকারীদের ভিডিও আপলোড, শেয়ার এবং স্ট্রিম করার সুযোগ দেয়।

৬. Android:

  • গুগলের মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম, যা স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেটের জন্য ব্যবহৃত হয়। Android হলো বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম, যা লক্ষ লক্ষ ডিভাইসে ব্যবহৃত হয়।

৭. Google Chrome:

  • গুগলের ওয়েব ব্রাউজার, যা দ্রুত এবং ব্যবহারকারীদের ওয়েব ব্রাউজিং অভিজ্ঞতাকে উন্নত করে। এটি সুরক্ষা, গতি এবং সহজ ব্যবহারযোগ্যতার জন্য জনপ্রিয়।

৮. Google Assistant:

  • গুগলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক ভয়েস সহায়ক, যা ব্যবহারকারীদের প্রশ্নের উত্তর দেয়, অ্যাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করতে সাহায্য করে।

গুগলের ব্যবসায়িক মডেল:

  • বিজ্ঞাপন: গুগলের মূল আয়ের উৎস হলো বিজ্ঞাপন। Google Ads প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে গুগল বিজ্ঞাপনদাতাদের তাদের বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের সুযোগ দেয়, যা গুগলের সার্চ ইঞ্জিন, YouTube, এবং অন্যান্য সেবার মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের কাছে পৌঁছায়।
  • ক্লাউড কম্পিউটিং: গুগল তাদের ক্লাউড পরিষেবা (Google Cloud) ব্যবহার করে বড় বড় ব্যবসা এবং প্রতিষ্ঠানকে ডেটা সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াকরণের সুযোগ দেয়।
  • হার্ডওয়্যার: গুগল Pixel স্মার্টফোন, Nest স্মার্ট হোম ডিভাইস এবং Chromecast এর মতো হার্ডওয়্যার পণ্যও সরবরাহ করে, যা তাদের পণ্যের পরিসীমা বাড়িয়ে দেয়।

গুগলের প্রভাব এবং গুরুত্ব:

  • ইন্টারনেটের প্রবেশযোগ্যতা: গুগলের সার্চ ইঞ্জিন ইন্টারনেটের তথ্য সহজলভ্য করেছে, যা মানুষকে দ্রুত তথ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করেছে।
  • ক্লাউড এবং মেসেজিং পরিষেবা: গুগলের ক্লাউড সেবা এবং Gmail-এর মতো মেসেজিং পরিষেবাগুলো দৈনন্দিন কাজকে সহজ এবং কার্যকর করেছে।
  • বিজ্ঞাপন বিপ্লব: গুগলের বিজ্ঞাপন মডেল ব্যবসায়িক সংস্থাগুলিকে অনলাইনে তাদের পণ্য এবং পরিষেবা প্রমোট করতে সাহায্য করেছে, যা অনলাইন বিজ্ঞাপনের ধরন এবং বিপণনে বিপ্লব এনেছে।

গুগলের ভবিষ্যৎ এবং আধুনিক উদ্ভাবন:

গুগল নিয়মিত নতুন প্রযুক্তি এবং পরিষেবা উদ্ভাবন করে। এর মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), মেশিন লার্নিং (ML), এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটিং নিয়ে গবেষণা অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া, গুগল পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তি এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে তাদের ডেটা সেন্টারগুলোর কার্যকারিতা বাড়াচ্ছে এবং কার্বন নিঃসরণ কমাচ্ছে।

গুগল বর্তমানে ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তি জগতে একটি বিপ্লবী কোম্পানি এবং এটি বিশ্বের তথ্য সংরক্ষণ এবং ব্যবহারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

Content added By
Content updated By

Read more

Promotion